আপন ভাবি যখন বউ পর্ব ২

ভাবী যখন বউ পর্ব ২

আপন ভাবি যখন বউ পর্ব : ২

১ম পর্বের পর…

তারপর আমি মিরার হাত ধরে টেনে বিছানার দিকে যেতে লাগলাম। মিরা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কিছু বলতেও পারছে। আমি মিরাকে শুইয়ে দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম। মিরা লজ্জায় চোখ বুঝে নিলো নিমিষেই। আমি অনুভব করলাম মিরার যেন কেমন কেমন লাগছে। এতোদিন তো নিশান ভাইয়ার সাথে সংসার করলো। আর এখন তারই আপন ছোট ভাইয়ের সাথে। ছিঃ ! নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে মিরার।

 

ভাবি যখন বউ পর্ব ২
ভাবি যখন বউ পর্ব ২

 

তারপর এসব ভাবনা ভাবতে-ভাবতেই মিরা ঘুমিয়ে গেলো আর আমি উঠে পড়লাম। আর সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। আর তারপর আমার প্রেমিকা নিলার কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়েও পড়লাম। সকালে চোখ খুলেই দেখলাম…

আমার প্রেমিকা নিলার ৫  টা মেসেজ ! মেসেজ গুলো  দেখে আমার চোখ একদম চড়কগাছ ! মেসেজ গুলো ওপেন করলাম।

১ম মেসেজ :  কনগ্রাচুলেসন মিঃ কাব্য।

২য় মেসেজ : ? আপনার বিবাহিত জীবন সুখী হোক।

৩য় মেসেজ :  তুমি কি জানতে না যে, আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসতাম। তুমি কেনো এমন করলে আমার সাথে ?  কি দোষ করেছিলাম আমি ? আর আমার অপরাধটা কি ছিল ?

৪র্থ মেসেজ :  ইউ আর এ গ্রেট চিটার কাব্য। ইউ আর এ গ্রেট লায়ার।

৫ম মেসেজ : সেদিন কি বলেছিলে মনে আছে তোমার ? তোমার জীবন চলে গেলেও তোমার কাছ থেকে কেউ আমাকে আলাদা করতে পারবে না। আর এই তার নমুনা ?

তবুও সর্বশেষ একটা জিনিসই চাই, তুমি অনেক সুখে থাকো।

 

মেসেজ গুলো পড়ে আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে,  নিলা আমার বিয়ের বিষয়টা জেনে গেছে। Ohh shit ! এখন কি করে বুঝাবো নিলাকে যে, আমি নিজের থেকে এই বিয়ে করতে চাই নি, কি করে বোঝাবো ? uff ! আমি কি করি এখন ? সত্যিই নিলা আমাকে অনেক ভালোবাসে। তাই সে এই বিয়ের বিষয়টা সহ্য করতে পারেনি। তখনই আমি তাড়াতাড়ি করে নিলার ফোনে কল করলাম। কিন্তু নাহ! বন্ধ দেখাচ্ছে ! নিলা  সত্যি আমাকে প্রতারক ভেবে নিলো। আমি আর কি করবো ? কিন্তু, নিলা যাই করুক না কেন, নিলাকে ছাড়াতো আমি থাকতে পারব না। আম্মুকে নিলার কথাটা বলা হয়নি। বলার সময়ও পাইনি। আর হঠাৎ করেই বিয়েটা হয়ে গেল

 

তখনই…

মিরা: কাব্য, কোনো সমস্যা ?

আমি এতক্ষণ সময় ধরে নিলাতেই মগ্ন ছিলাম। হঠাৎ কারো কন্ঠ শুনেই চোখ তুলে তাকালাম। দেখলাম মিরা দাঁড়িয়ে আছে…

মিরা : উঠে, পড়েছো?

আমি : হুমম

মিরা : বললে না তো।

আমি : না, তেমন কিছু না।

মিরা : আমি জানি সমস্যাটা কি ।

আমি ততক্ষণ অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম মিরার দিকে। মেয়েটার মাঝে আশ্চর্য এক ক্ষমতা আছে, মনের কথা সহজেই বুঝে নিতে পারে কিভাবে যেন।

 

মিরা : নিলা বিয়ের ব্যাপারে জেনে গেছে তাই না ?

 

আমি মাথা নাড়ালাম, হুমম।

মিরা : ভয় পেয়ো না। তুমি শুধু আমার আর নিলার যোগাযোগ করিয়ে দিও। বাকিটা আমিই দেখে নিবো।

আমি : ঠিক আছে ।

মিরা : আচ্ছা মনে থাকে যেনো।

বলে মিরা ওয়াস’রুমে ডুকলো এবং ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে এলো। তারপর আমাকে বললো,

মিরা : ফ্রেস হয়ে নিচে আসো।

তারপর মিরা নিচে চলে গেলো। আমি এখনও বুঝি না মেয়েটা আমার কেয়ার করছে নাকি আমি মেয়েটার কেয়ার করছি।

 

তারপর ফোনটা হাতে নিয়ে নিলার ফোনে আবার ট্রাই করলাম। নাহহ, সংযোগ বন্ধ দেখাচ্ছে এখনও। আর এই মেয়েটাও না একটুতেই অভিনয় করে ফেলে। তবে , এই ব্যাপারটাতো একটুখানি না অনেক বড়ই। কারো ভালোবাসার মানুষ এর অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে গেলে কেউই স্বভাবিক থাকতে পারেনা। নিলাকে নিয়ে আমার প্রচুর চিন্তা হচ্ছে। আমার এমন কর্ম-কান্ডে অনেক কষ্ট পেয়েছে নিলা। এসব ভাবনা ভাবতে ভাবতেই ওয়াসরুমে ডুকলাম।

 

মিরা মনে মনে : খুব অস্থির লাগছে আমার। রাতে একটুও ঘুম হয়নি। কাব্য ভেবেছিলো আমি ঘুমিয়ে পড়েছি কিন্তু, আমি আসলে ঘুমাইনি। কি করে ঘুমাবে মিরা ? এতদিন যার স্পর্শে আমি ঘুমের দেশে তলিয়ে যেতাম এখনতো সেই নেই ! তাহলে মিরা ঘুমাবে কি করে ? নিশান কি আর কখনও ফিরে আসবে না ? আর  যদিও আসে তাহলে যদি শুনে যে ওর ছোট ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে তখন কি ভাববে নিশান ? নিশ্চয়ই খারাপ ভাববে আমাদের। আমার জন্যই কাব্য ওর ভালোবাসাকে হারাতে চলেছে এখন । নিজেকে কঠোর শাস্তি দিতে ইচ্ছে হচ্ছে আমার। যে করেই হোক না কেনো নিলার আর কাব্যের ভালোবাসা আবার সহজ করে দিতে হবে। সমস্যার সমাধান করতেই হবে।

 

কাব্য : এদিকে আমি ফ্রেস হয়ে একটা শার্ট পড়ে নিচে নামলাম। বাসাটা বেশ উৎসব মুখর। তেমনটা না হলেও তবুও একমত আর কি ? যতই হোক না কেনো, ছোট ছেলের বিয়ে। নিচে নামতেই দেখলাম মিরা ও আম্মুর মধ্যে কথোপ-কথন চলছে।

 

মা : কিরে মা এতো তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেলো ?

মিরা : হুমম।

‘ছোট্ট করে অল্প স্বরে উত্তর দিলো মিরা আর মা মিরার থুঁতনি ধরে মুখটা উঁচু করে ধরলেন’।

 

মা : তুই কিন্তু আমার সাথে প্রমিস করেছিলি যে, নিজেকে শক্ত রাখবি। নিশান এর কথা ভেবে কষ্ট পাবি না আর। ( যদিও মায়ের চোখে পানি আছে, তবুও বললেন )

 

মিরা : তাহলে তুমি কাঁদছ কেনো আম্মু ? ( ভাঙা গলায় বললো )

আর তখন সাথে সাথে আম্মু ও ধুকরে কেঁদে উঠলেন ।

মা : আমার ছেলেটা এখন কোথায় আছে কে জানে ?

( কাঁদতে কাঁদতে বললেন আম্মু )

মিরা : আম্মু, তোমার যেমন কষ্ট হচ্ছে। আমারও তেমনি কষ্ট হচ্ছে মা । তাহলে আমি নিজেকে সহজ করব কি করে বলো তুমি ?

 

আম্মু তখন মিরাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। দুজনেই কাঁদছে একসাথে ।

মা : আম্মু, কাব্য’কে এসবের মধ্যে জড়ানোর কি দরকার ছিল ?

মা : তোর মতো এত ভালো আর মিষ্টি মেয়ে’কে হারাতে চাই না আমি। ( মিরা তখন আম্মু’কে জরিয়ে ধরলো আরও শক্ত করে )

মিরা : কিন্তু, কাব্যের জীবনটা আর ভবিষ্যতটা যে নষ্ট করে দিলে !

মা : আমার বিশ্বাস আছে, এতে কাব্যের জীবন নষ্ট নয় বরং আরোও ভালো হবে তুই দেখিস। অনেক সুন্দর হবে। যার তোর মতো ভালো একটা বউ আছে তার জীবন নষ্ট হয় কিভাবে বল ?

মিরা তখন নির্লিপ্ত দৃষ্টি’তে তাকিয়ে আছে আম্মু’র দিকে।

 

মা : আচ্ছা যা এখন টেবিলে গিয়ে বস। আমি তোর জন্য নাস্তা রেডি করছি।

তখন আম্মু আমার দিকেই আসলেন। আমাকে দেখেই মিষ্টি একটা হাসি দিলেন তিনি আর বললেন,

মা : ঘুম ভাঙল তোর ?

আমি : হুমম।

ম : যা, টেবিলে যা।

আমি টেবিল এর  দিকে না গিয়ে একটু বাহিরের দিকে গেলাম। নিলাকে ফোনে আবারও ট্রাই করলাম । দেখি পাই কি না ? কিন্তু, না এখনো নিলা তার ফোন সুইচড অফ করে রেখেছে ।

 

হতাশায় তখনই হঠাৎ করে আরো একবার ট্রাই করতেই ফোন ডুকে গেলো। ২/৩ বার কল রিং হওয়ার পর নিলা রিসিভ করলো।

 

আমার কল রিসিভ করেই নিলা বলতে লাগলো,

নিলা :কি আর বলবে তুমি ?  বাসর রাতের গল্প শুনাবে নাকি অন্য… ২য় পর্ব শেষ

 

ভবি যখন বউ, ৩য় পর্ব পড়ুন…

1 thought on “ভাবী যখন বউ পর্ব ২”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *